সিজারিয়ানে সন্তান প্রসবের পর মায়ের বিশেষ যত্ন নিতে হয়, যাতে মা তার আগের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে। প্রসবপরবর্তী ৬-৮ সপ্তাহ একজন মায়ের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ সময়। প্রসবপরবর্তী দিনগুলো মা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং, বিশেষ করে মায়ের যদি সিজারিয়ান অপারেশন হয়।
সিজারিয়ান একটি বড় ধরনের অস্ত্রোপচার, যেখানে পেটের বিভিন্ন স্তরের টিস্যু কাটা হয়। সিজারের প্রভাব মায়ের ওপর শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও পড়তে পারে।
সিজারের পর মায়ের যত্ন একদিকে মাকে যেমন গর্ভ ও প্রসবসংক্রান্ত বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তনের পূর্বের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সাহায্য করে, তেমনি মাকে এ সময়ের বিভিন্ন জটিলতা থেকেও রক্ষা করে।
এ সময় হেঁটে বাথরুমে যাওয়াটা কষ্টকর হতে পারে মায়ের জন্য। কিন্তু এই নড়াচড়া সেরে ওঠার জন্য খুবই উপকারী। এর ফলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমে যায়। সার্জারির পর শুয়ে থাকা অবস্থাতেও পা নাড়িয়ে, স্ট্রেচিং করে পায়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখা যায়।
কাজ ও বিশ্রাম
সিজারিয়ান একটি মেজর সার্জারি। অন্য যেকোনো সার্জারির মতোই তা সেরে ওঠার জন্য সময় দিতে হবে। সিজারের পর স্বাভাবিকভাবেই মাকে বিশ্রামে থাকতে হবে এবং অন্যদের তার কাজে সাহায্য করতে দিতে হবে। এই সময়টুকু নিজের শরীরকে সুস্থ করার জন্য ভালোমতো বিশ্রাম করা জরুরি, অন্তত প্রথম ছয় সপ্তাহ থাকতে হবে বিশ্রামে।
যদিও এটা বলার চাইতে করাটা অনেক কঠিন। বাচ্চার কারণে বিশ্রাম নেওয়াটা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। এসময় বাচ্চার যত্নআত্তির কাজে পরিবারের অন্য সদস্যরা সাহায্য করতে পারে। যদিও এই সময়টা শরীরকে বিশ্রাম দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কিন্তু অনেক মা এভাবে হাত-পা ছড়িয়ে বসে থাকতে অনুশোচনা বোধ করেন, অন্যের ওপর নির্ভর করতেও সঙ্কোচ বোধ করেন। কিন্তু এ সময় এসব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে নিজের এবং বাচ্চার স্বার্থে তা করতে হবে।
শুধু শুয়ে বসে সময় না কাটিয়ে সিজারের সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মাকে বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে যেতে উৎসাহিত করা হয়। তবে এ সময় হাঁটাচলা ধীরে-সুস্থে করতে হবে। কারণ হাঁটলে সেলাই দ্রুত শুকায়, রক্ত জমাট বাঁধে না এবং ব্যথা প্রশমন ত্বরান্বিত হয়। নিয়মিত হাঁটা শুধু ক্যালরি বার্ন করে না, অপারেশনের পর শরীরের অ্যানার্জি লেভেল বাড়াতেও সাহায্য করে।
কাটা স্থানের যত্ন
সিজারের ক্ষেত্রে কাটা স্থানের যত্ন নিতে হবে। প্রতিদিন হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে শুকিয়ে নিন। যদি কাটা স্থানটি কাপড়ের সঙ্গে ঘষা লাগে, তবে এর ওপর গজ ব্যান্ডেজ লাগিয়ে নিতে পারেন। ঢোলা, আরামদায়ক এবং সুতির কাপড় পরার চেষ্টা করুন। কাটা স্থানে ইনফেকশন হচ্ছে কি না খেয়াল রাখুন। যদি ক্ষতস্থান লাল হয়ে যায় বা বেশি ব্যথা হয়, তবে ডাক্তারকে জানান। এ সময় সুইমিংপুল বা হট টাব এড়িয়ে চলা উচিত।
বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো
বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো শুধু বাচ্চার জন্যই উপকারী নয়, এটা মায়ের জন্যও অনেক উপকারী। যেসব মা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান তাদের ওজন অন্য মায়েদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত দ্রুত ঝরে যায়। কারণ বুকের দুধের মাধ্যমে বাচ্চাকে পর্যাপ্ত পুষ্টি দিতে গিয়ে মায়ের শরীর থেকে অনেক বেশি ক্যালরি ক্ষয় হয়। যার ফলে ওজন ঝরে যেতে শুরু করে। এজন্য শুধু জন্মের প্রথম ছয় মাসই নয়, বরং এরপরও বাচ্চাকে অন্তত এক বছর পর্যন্ত নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত।
যেসব কাজ এড়িয়ে চলতে হবে
সিজারিয়ানের পর কিছু কিছু কাজ বেশ কিছুদিনের জন্য এড়িয়ে চলা উচিত। সিজারিয়ানের পর ক্ষতস্থানে বার বার হাত দেওয়া উচিত নয়। এতে ইনফেকশনের সম্ভাবনা বাড়ে। বাসায় ফেরার সঙ্গে সঙ্গে গৃহস্থালির কাজকর্ম শুরু করার প্রয়োজন নেই। এসব কাজে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাহায্য নিন। সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা যতটা সম্ভব কম করা উচিত। এ ছাড়াও ভারী জিনিস ওঠানো বা বহন করা আপাতত বন্ধ রাখতে হবে।
সিজারিয়ানের পর কিছুদিন পর্যন্ত নিজের বাচ্চাকে কোলে নেওয়াটাও কষ্টকর হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই সেটা খুব বেশি করার প্রয়োজন নেই। আপনি চেয়ারে বসে অন্য কাউকে বলুন বাচ্চাকে আপনার কোলে তুলে দেওয়ার জন্য।